শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

অটোরিক্সা-চার্জার রিক্সার চালক-মালিকদের ৯ সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন বুধবার,রংপুরে টাউন সার্ভিস চালু ঘিরে শ্রমিক-মালিক অস্তোষ! – ৭১বার্তা

এস,এম লিটন, রংপুর :
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৮১ বার পঠিত
রংপুর নগরীর প্রধান সড়কে যানজটমুক্ত ও শৃঙ্খলা আনতে টাউন সার্ভিস চালুকে কেন্দ্র করে অটোরিক্সা, চার্জার রিক্সার মালিক-চালকের সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামছে। নানান প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে চালক-মালিকদের ভেতরে-বাইরে। অপরদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অফিসের কনফারেন্স রুমে গতকাল সোমবার “রংপুর মেট্রোপলিটন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির কার্যকরী সভা” অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা গেছে, বিভাগীয় নগর রংপুরের প্রধান সড়কে নগর পুলিশের উদ্যোগে টাউন সার্ভিস নামানোর প্রক্রিয়া নিয়ে মেডিকেল মোড় টু মডার্ণ মোড় ও মডার্ণ মোড় টু সাতমাথা সড়কের ২টি রুটে যাত্রীসেবা দানে এই উদ্যোগ নিতে যা”েছ। নগরীতে যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ২টি রুট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া চললেও ভাবা হ”েছ না নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় অর্ধলক্ষাধিক ছোট ছোট চার্জার রিকসা ও অটো রিক্সা চালক-মালিকদের কথা। এসব বাহণের মালিক-চালকের সাথে জড়িত স্ব-স্ব পরিবারের সদস্যদেরও কথা গুরুত্বেও সাথে ভাবা ও প্রয়োজন রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। ছোট ছোট যানবাহণের প্রায় ১১টি সংগঠন থাকলেও হাতে গোনা ২/৩টি সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।

বিভাগীয় নগর হলেও রংপুরে নেই বড় ধরনের শিল্প কল কারখানা, গার্মেন্টস। একটি মাত্র বিসিক শিল্প নগরী থাকলেও তা চলছে ঢিমেতালে। নেই ইপিজেড। শিল্প উদ্যোক্তারা পিছিয়ে থাকছেন ভারী শিল্প কল কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, যার ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে বেকারত্ব। মানুষের কর্মসং¯’ান সৃষ্টির তেমন কোন উদ্যোগ নেই। এর মূল কারণকে দায়ী করা হ”েছ গ্যাস সরবরাহ না করার অভাবে এখানে গড়ে উঠছে না ভারী শিল্প কল কারখানা। বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত ওভার ব্রীজ না থাকায় স্কুল কলেজের বিভিন্ন বয়সি শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন বয়সি মানুষজন সড়ক পারাপারে বর্তমানে হুমকির সম্মুখিনে পড়ছেন প্রতিদিনই।

তার উপর এখানে কোন বাইপাস সড়ক নেই। একটি মাত্র প্রধান সড়ক হওয়ার ফলে ছোট ছোট যানবাহণ চলাচলে চরম যানজট সৃষ্টি হয়। ফুটপাত ফাকা করেও কোন সুফল আনতে পারছে না নগর পুলিশ। কোন প্রতিকার নেই বললেই চলে। তার উপর এই প্রধান সড়কে পরিবহণ সার্ভিস নামানো হয়? ভোগান্তি আরো তীব্র হতে তীব্রতর হয়ে উঠবে। জনদুর্ভোগ কমার চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করবে। অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়বে আশঙ্কাজরক হারে। এখানে যদি ফ্লাই ওভার ব্রীজ থাকত তাও টাউন পরিবহণ সার্ভিস চালু করলে সহায়ক হতো মানুষজনের। নেই আন্ডার পাস সড়কও।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাতীয় অটো রিকসা শ্রমিক পার্টি রংপুর মহানগর শাখা, বাংলাদেশ অটো শ্রমিক লীগ (বি-২০৪৪) রংপুর মহানগর শাখা, চার্জার রিক্সা ও ভ্যান জাতীয় শ্রমিক পার্টি (বাজাফে-৩৩) রংপুর মহানগর শাখা, রংপুর মহানগর জাতীয় রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-৭১৩), রিক্সা চালক ইউনিয়ন রংপুর মহানগর শাখা (রেজি নং রাজ-৮৫৯), রংপুর মহানগর ঠেলা ও মাল বাহী ভ্যান কুলি শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-১৯), এ ছাড়াও বিএনপি সমর্থিত ২টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। রংপুর মহানগর রিক্সা মালিক সমিতি (রেজি নং রং-৩২), রংপুর মহানগর জাতীয় রিক্সা ভ্যান পরিবহণ মালিক সমিতি (রেজি নং রং-৩৩)

এদিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির কার্যকরী সভা” আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার  মোঃ মনিরুজ্জামান বিপিএম-বার। ওই সভায় রংপুর মহানগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রী-পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, পরিবহন বিভাগের মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দের উপ¯ি’তিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
উপ¯ি’ত ছিলেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞা, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান, এলজিইডি, রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, পুলিশ সুপার  মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী,  রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টি’র প্রেসিডেন্ট মোঃ রেজাউল ইসলাম, রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি একে চৌধুরী (ক্যাপ্টেন) সহ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিভিন্ন জেলা মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ।

আলোচনায় পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান বিপিএম-বার বলেন, সরকারের নীতি বাস্তবায়ন করাই আমাদের কাজ। এজন্য জনগণকে সরকার নির্ধারিত আইন-বিধি মেনে-বুঝে সে অনুযায়ী চলতে হবে। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন, সকলকে যথাযথ ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহŸান জানান। এজন্য মহানগর এলাকায় ফিটনেস বিহীন গাডী, লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট ব্যাতিত চলাচল করতে পারবে না।

আবার রংপুর মহানগরে চলাচলরত ৯০% গাড়ী এক ধরনের রেজিস্ট্রেশনকৃত হলেও তা অন্যভাবে চালায় অর্থাৎ এম্বুলেন্স এর লাইসেন্স করা গাড়ী প্রাইভেট হিসেবে ব্যবহার করে। এই ধরনের ক্ষেত্রে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং প্রথমদিকে এখন আমরা ধীরে চলনীতি অবলম্বন করলেও এ ধরনের পরি¯ি’তি অব্যাহত থাকলে আমাদের শেষ পর্যন্ত আমাদের কঠোর নীতি অবলম্বন করতে হবে। সরকার এবং আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, সবকিছুকে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসা। এছাড়া তিনি কর্তৃপক্ষকে নগরীর যানজট নিরসনে রাস্তার পাশে বিল্ডিং এর অনুমোদনের ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের অনুমতি গ্রহণ এবং রাস্তার দুই পাশে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নিশ্চিত করার আহŸান জানান।

টাউন সার্ভিস চালু বিষয়ে রিক্সা চালক ইউনিয়ন রংপুর মহানগর শাখা (রেজি নং রাজ-৮৫৯)সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা বলেন, টাউন সার্ভিস নামালে নামবে, তবে শ্রমিকের কাউকে বেকার সৃষ্টি করে নয়। আগে মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তারপর এমন পদক্ষেপ নিলে আমরা সাদুবাদ জানাবো।

এ ব্যাপারে, চার্জার রিক্সা ও ভ্যান জাতীয় শ্রমিক পার্টি (বাজাফে-৩৩) রংপুর মহানগর শাখা সভাপতি মোঃ আব্দুল মাজিদ বলেন, আগের দিনে মানুষজন নিয়োগ করে ধান মাড়াই করা হতো, সেখানেও এখন মেশিন ¯’ান পাইছে। আবার শ্রমিক দিয়ে ইট ভাঙা হতো, এখন সেখানে ইট ভাঙারও মেশিন ব্যবহার করা হ”েছ। প্রতিদিন বেকার সংখ্যা বাড়ছে। চার্জার রিক্সা এসে যুবকসহ অনেক মানুষের কর্মসং¯’ান হয়েছে। চালকরা আয় রোজগার করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে। এখন যদি টাউন সার্ভিস নামে, তাহলে অনেকে বেকার হবে। পূর্বের মতো রংপুরে চুরি-ছিনতাই, চাদাবাজীসহ অপরাধ প্রবকণতা বাড়বে। এর দায় কে নেবে বলে মন্তব্য করেন এই শ্রমিক নেতা।

রংপুর মহানগর জাতীয় রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং রাজ-৭১৩) সাধারণ সম্পাদক বাবু শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, ২০টি গাড়ি নিয়ে টাউন সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ নিয়েছেন পুলিশ কমিশনার স্যার। আমরা এই মুহুর্তে টাউন সার্ভিসের সিদ্ধান্ত মেনে নিবো না। আমার শ্রমিক-চালকরা বেকার হবে, আর আমি তা মুখ বুঝে দেখবো? তা হয় না। সবার সহযোগিতা নিয়ে অবৈধ রিক্সা সনাক্ত করতে পুলিশকে আমরা সহযোগীতা করে আসছি এবং আগামীতেও করবো। কিš‘ নগরীর প্রধান সড়কে টাউন সার্ভিস চলার নামে আমাদের শ্রমিকরা বেকারের পথে যাবে, কর্মসং¯’ানের কোন পথ নেই এখানে। টাউন সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত ¯’গিত করার দাবিতে আমরা চার্জার রিক্সা ও অটোরিক্সার মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ হতে আগামীকাল মঙ্গলবার (আজ) বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের আহবান করেছি। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে মন্তব্য করেন এই নেই। বাংলাদেশ অটো শ্রমিক লীগ (বি-২০৪৪) রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমাদেও নিয়ে পুলিশ কমিশনার স্যার মিটিং করেছিলেন, আমরা বলেছি আমাদের সংগঠনের নেতাদেও সাথে আলোচনা কওে বিষয়টি আমরা জানাবো। আমাদের ১৫/১৬টি শাখা কমিটি রয়েছে, সকল কমিটির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি আমরা। নেতৃবৃন্দ কোন অব¯’ায়ই প্রধান সড়কে টাউন সার্ভিস নামার বিষয়টিকে ভালো বলেনি। সবাই অস্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই আমরা টাউন সার্ভিসের পক্ষে নেই। এটি চালু করা হলে প্রধান সড়ককে এক সময় অটোরিক্সা উঠতেও দিবে না। আয় কমে আসবে শ্রমিকের। পরিবারের নিত্যদিনের চাহিদানুযায়ী আয় না হলে বেকার। ফলে াপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনক হাওে বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রংপুর মহানগর জাতীয় রিক্সা ভ্যান পরিবহণ মালিক সমিতির (রেজি নং রং-৩৩) সভাপতি মাইদুল ইসলাম মিলন বলেন, কোন অব¯’ায় টাউন সার্ভিস চালু করাটা সমীচিন হবে না। সড়কে যদি গাড়ি না চালাতে পাওে, তাহলে শ্রমিক আর মালিকের পরিবার অনাহাওে দিন কাটাতে হবে। মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। এমনিতে দ্রব্যমূল্যের বাজার চড়া। আয় কম হলে মানুষজন চরম ভাবে কষ্টে দিন কাটাবে। আমাদেও উভয়ের দিকটা আগে ভাবা প্রয়োজন নগর পিতা এবং মেট্রোপলিটন কমিশনার স্যারের। অপরদিকে রংপুর মহানগর রিক্সা মালিক সমিতির (রেজি নং রং-৩২) সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ জানান, টাউন সার্ভিস আমাদের জন্য হবে একটা গলার কাটা।

অপরদিকে এই মুহুর্তে টাউন সার্ভিস নামানোর প্রয়োজন মনে হয় না এমন অভিমত ব্যক্ত করে রংপুর সিটি কপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবার রহমান মঞ্জু বলেন, মানুষের কর্মসং¯’ান সৃষ্টি করার জন্য ভারী কিংবা বড় কোন রকম কল কারখানা নেই রংপুরে। প্রায় ১ যুগ হলো সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার। বড় বাজেট প্রয়োজন এখানে উন্নয়নের জন্য। ওভারব্রীজও প্রয়োজনের তুলনায় নেই। মানুষজন সড়ক পারাপারের ক্ষেত্রেও হিমশিম খা”েছন।

এ ব্যাপারে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান, ৪৮ফিট ফোরলেন সড়ক। এখানে চাহিদামাফিক ওভারব্রীজ নেই। রাস্তা পারাপারেও মানুষজন দুর্ভোগে পড়ে। অটোরিক্সা ও চার্জার রিক্সা সব মিলে ১১ হাজার প্লাস নগর ভবনের নিবন্ধিত বাহণ রয়েছে। আমি তো তাদেও বেকারের মুখে ফেলে দিতে পারি না, প্রধান সড়কে টাউন সার্ভিস ও এসব বৈধ বাহন চলাচল করলে তো বিশৃঙ্খলা হওয়াটা স্বাভাবিক। মানুষ টাউন সার্ভিসের সুফলের চেয়ে ভোগাšি তে পড়বে এটা সত্য। তাই এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। সম্পাদনা- মোস্তাফিজার বাবলু। 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো কিছু জনপ্রিয় সংবাদ
© All rights reserved © 2023 71barta.com
Design & Development BY Hostitbd.Com